Header Ads

সদরঘাট

সদরঘাট (Sadarghat) মেগাসিটি ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নদী বন্দর। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হবার পরে যদিও জৌলুশ হারিয়েছে সদরঘাটের। এরপরও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় যাতায়াত করার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই নন্দী বন্দর। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো যেমন— পটুয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, হাতিয়া ও বাগেরহাটসহ প্রায় ৪৫টি নৌপথে লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করে।
 
সদরঘাটের ইতিহাস
বাংলাদেশের আদি ঢাকা শহরের নদীবন্দর সদরঘাটের গোড়াপত্তন ঠিক কবে হয়েছে তার সঠিক তথ্য ইতিহাসে অনির্দিষ্ট। তবে এই নদীবন্দরকে ঘিরে উনিশ শতকে একটি ব্যবসায়িক জনপদ গড়ে ওঠে। একবিংশ শতকের শুরুতেও এটির গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রয়েছে। এর সন্নিহিত এলাকা পুরান ঢাকা নামে প্রসিদ্ধ। এর অতি নিকটে রয়েছে পুস্তক প্রকাশনার ঘাঁটি বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন এবং আহসান মঞ্জিল। সর্বোপরি, বিভিন্ন নদী পরিবাহিত পণ্য, বিশেষ করে মাছ ও ফলের সুবিশাল সব আড়ত রয়েছে এই নন্দী বন্দরের পাশে। সারাদেশ, বিশেষ করে, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরের নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকেন্দ্র এই সদরঘাট। অসংখ্য লঞ্চ ঘাটে ভিড় করে থাকে। ডিঙ্গি নৌকাগুলো সারাদিন যাত্রী নিয়ে এপার-ওপার করে, কুলিদের শোরগোল—সব কিছু মিলে সদরঘাট এমন একটি জায়গা যা কখনো নীরব থাকে না।

প্রাচীন জনপদ, সভ্যতাগুলোর উত্পত্তি ও ক্রমবিকাশ নদীকে কেন্দ্র করে। সভ্যতার অগ্রগতিও হয়েছে নদীর গতির সাথে তাল মিলিয়েই। ঢাকা নগর হিসেবে গড়ে উঠেছিল ‘ঢক্কা’ নামের বৃক্ষবহুল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। বুড়িগঙ্গা নদীর প্রাচীনত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় ‘বৃদ্ধগঙ্গা’ নামের দুই হাজার বছর আগে রচিত কলিকা পুরাণে। আকবরনামা’ গ্রন্থে ঢাকা একটি থানা বা সামরিক ফাঁড়ি হিসেবে এবং ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে সরকার বাজুহার একটি পরগনা হিসেবে ঢাকার উল্লেখ রয়েছে। মূল ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে নদীটির অবস্থান এবং সারাদেশের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগের পথ সব দিক বিবেচনায় ভালো হবার কারণে প্রতিরক্ষা, প্রশাসনিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৎকালীন নগর স্থপতিরা বেছে নেন এই স্থানটি।
কিভাবে যাবেন
মেগাসিটি ঢাকার যে কোনও স্থান থেকে বাস বা অন্যান্য যানবাহনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসা যায়। সেখান থেকে রিকশায় বা পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায় সদরঘাট। এছাড়া গুলিস্তান এসেও রিকশায় যেতে পারবেন সদরঘাটে। ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা সিএনজিতে করে সরাসরি সদরঘাট আসতে পারবেন।
 
সদরঘাটে কি দেখবেন
সদরঘাটে দেশের সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে বড় নৌযানগুলোর দেখা মিলে। আপনি যখনই যান ঘাটে সেই বিশাল নৌযান গুলো দেখতে পারবেন। ঘুরে ঘুরেও দেখতে পারবেন। একটা ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা পাবেন নিশ্চিত। এছাড়া এখানে নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভ্রমণ করতে পারবেন। সদরঘাটের কাছে রয়েছে আহসান মঞ্জিল। সময় মিলে গেলে সেখানেও ঢু মারতে পারবেন।
 
খাবার দাবার
সদরঘাটের সামনেই কিছু খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া পুরান ঢাকার মজার খাবার যেতে পারেন লক্ষীবাজার, নারিন্দা কিংবা নাজিরা বাজার। জনসন রোডের হোটেল স্টার, বাংলাবাজারের নিউ ক্যাফে কর্ণার ও বিউটি বোর্ডিং পুরান ঢাকার খুবই পরিচিত স্থান। বাজেট নিয়ে সমস্যা না থাকলে সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা রিভারভিউ রেস্টুরেন্টে (Buriganga Riverview Restaurant) যেতে পারেন। যেখান থেকে সদরঘাটের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন।
 
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
সদরঘাট এর পাশেই বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসান মঞ্জিল, আর্মেনিয়ান চার্চ, তারা মসজিদ, লালবাগ কেল্লাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। পুরান ঢাকার একদিনের প্ল্যানে অনেকগুলো জায়গাই ঘুরে দেখতে পারবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.